পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নে ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) চাল বিতরণে ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দরিদ্র ও হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত এই চাল বিতরণে ব্যাপক দুর্নীতির ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, তিনজন সুবিধাভোগীর চাল একসঙ্গে একটি বস্তায় মেপে ওজন করা হলে তা নির্ধারিত ৩০ কেজির চেয়ে ৬ থেকে ৯ কেজি পর্যন্ত কম পাওয়া যায়। অর্থাৎ, প্রত্যেকের (প্রতি স্লিপে) চালের বস্তা থেকে গড়ে ২ থেকে ৩ কেজি করে চাল কম দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউপি সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন যে, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন—তাঁর ভাই, ভাতিজা এবং ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা প্রায় ৩ থেকে ৪ শতাধিক ১০ কেজি চালের স্লিপ (সনদ) অবৈধভাবে বিক্রি করেছেন। এসব স্লিপ কিনে নিয়েছেন পাশের বাজারের এক চাল ব্যবসায়ী ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চাপানী গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্করের পুত্র মাজেদুল ইসলাম।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাজেদুল ইসলাম বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে এসব স্লিপ সংগ্রহ করে, এবং লোক সেটিংয়ের’ মাধ্যমে চাল উত্তোলন করে নিয়েছেন। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান একরামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “কে কোথায় স্লিপ বিক্রি করেছে, সেটা আমি কীভাবে জানবো?”—এই বলে তিনি মন্তব্য এড়িয়ে যান।ভিজিএফ স্লিপ ব্যবসায়ী হিসেবে অভিযুক্ত মাজেদুল ইসলাম বলেন, “চাল আতপ হওয়ায় অনেকেই সেটা খেতে চায় না, তাই তারা স্লিপ বিক্রি করে দিয়েছে। আমি সেই স্লিপগুলো কিনে নিয়েছি।” তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি দোকানের ড্রয়ারে স্লিপ লক করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন এবং বলেন, “ঈদের গরু কিনতে যাচ্ছি।”

বিতরণের তদারকিতে থাকা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ও ভিজিএফ কর্মসূচির দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাক্স অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, “এই ইউনিয়নে ৫,০০৫ জন হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে।” তবে অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কেন মন্তব্য করেননি। তাঁর ভাষ্য, “আমি এই এলাকার মানুষ নই এবং এখানকার কাউকে চিনি না।”

ভিজিএফের মতো একটি মানবিক সহায়তা কর্মসূচিতে এ ধরনের ভয়াবহ অনিয়ম সাধারণ মানুষের আস্থা ও প্রত্যাশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দ্রুত তদন্ত এবং এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন এলাকাবাসী। তাদের প্রশ্ন, দরিদ্রের জন্য বরাদ্দকৃত এই চাল শেষ পর্যন্ত কার পেটে গেল?এ প্রসঙ্গে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইমরানুজ্জামানকে ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।

এক্সক্লুসিভ রিলেটেড নিউজ

সর্বশেষ